চতুর্থ
পর্ব
অনুপম - কবিতা কী তাহলে ক্রমশ প্রসাধনের মতো হয়ে উঠবে? জীবন বহির্ভূত কোনো শিল্প? শিল্পীর যন্ত্রণা থেকে প্রাণ পায় শিল্প-এই দীর্ঘদিনের ধারণা থেকে কি সরে আসিনি আমরা?
অমিতাভ - একটা কিছু তো থাকেই, অনুপম। হতে পারে সেটা হাড় ভেঙে যাওয়া তীব্র ব্যথা নয়। সুনীলের "দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন একজন দার্শনিক"কবিতায় দার্শনিকের উপরিতলের সমস্যা নয়। জীবনানন্দেরর 'বোধ' কবিতায় একজন শিল্পীর সুদূর যন্ত্রণার ধারণা দেওয়া আছে।
বহুবছর আগে আমি তলস্তয়ের "The death of Ivan Glych" গল্পে ইভান ইলিচের অদ্ভুত অসুখ ও যন্ত্রণার মধ্যে একজন কবির যন্ত্রণারর চূড়ান্ত বিন্দুটি খুঁজে পেয়েছিলাম। একজন প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মানুষ, বড়ো চাকুরে ইভান ইলিচ বাড়ির কাজ করতে গিয়ে পড়ে যান এবং যৎসামান্য চোট পান। ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায়। কয়েকদিন পর আস্তে আস্তে মুখের ভেতরে এক বিজাতীয় স্বাদ টের পেতে শুরু করে ইভান। তারপর শুরু হয় যন্ত্রণার এক ধীর, নিশ্চিত এগিয়ে আসা। একসময় সেই যন্ত্রণা আর শারীরিক থাকেনা। হয়ে ওঠে যেন এক আধ্যাত্মিক যন্ত্রণা, উপশম নেই যার। তার মনে হয় এই হচ্ছে তার আত্মার স্বর, যার কাছে তাকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
তলস্তয়ের গল্পের অভিমুখ আলাদা ,আবেদনও অন্যরকম। আমি কয়েক পা এই গল্পটির সাথে হাঁটলাম, কারণ বছর ত্রিশ আগে গল্পটির এই অংশে ইভান ইলিচের এই আত্মার স্বর, এই অজাগতিক যন্ত্রণা আমার কাছে কবির যন্ত্রণার প্রতিরূপ হয়ে এসেছিল।
জোসেফ কে-এর প্রশ্ন, সন্ধান ও সংশয়েও কিছুটা সুদূরভাবে সেই আত্মার স্বর, সেই অজাগতিক রহস্যময় শক্তি-যা কবিতা হয়তো-তার সামনে কোনো কবির অসহায়, নিয়তি তাড়িত আত্মসমর্পণ দেখেছিলাম। খুবই কষ্টকল্পনা। বিসদৃশ দুটো বস্তুকে খুব জোর করেই জুড়ে দেবার চেষ্টা যেন। তবু মনে হয়েছিল যে, সেটা তো ঠিকই।
কাফকা কে আমি পড়েছি কবিতা পড়ার মতো করে। কোণঠাসা, ভীত। নানারকম ছন্নছাড়া জটিল একজন কবি-কাফকাকে আমি এরকমই ভাবি। মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা রক্তস্রোত দেখে যাঁর একবারও মনে পড়ে না প্রবল হয়ে ওঠা যক্ষ্মা রোগের কথা, আসন্ন মৃত্যুর কথা। বরং তাঁর মনে হয় তিনি ফিরে যাচ্ছেন শৈশবে, আর অসুখ তাঁর মা। যেন ছোট্ট ফ্রানজ্ মায়ের ঠিক পাশে মায়ের স্কার্টের প্রান্ত মুঠোয় ধরে দাঁড়িয়ে।
অমিতাভ - একটা কিছু তো থাকেই, অনুপম। হতে পারে সেটা হাড় ভেঙে যাওয়া তীব্র ব্যথা নয়। সুনীলের "দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন একজন দার্শনিক"কবিতায় দার্শনিকের উপরিতলের সমস্যা নয়। জীবনানন্দেরর 'বোধ' কবিতায় একজন শিল্পীর সুদূর যন্ত্রণার ধারণা দেওয়া আছে।
বহুবছর আগে আমি তলস্তয়ের "The death of Ivan Glych" গল্পে ইভান ইলিচের অদ্ভুত অসুখ ও যন্ত্রণার মধ্যে একজন কবির যন্ত্রণারর চূড়ান্ত বিন্দুটি খুঁজে পেয়েছিলাম। একজন প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মানুষ, বড়ো চাকুরে ইভান ইলিচ বাড়ির কাজ করতে গিয়ে পড়ে যান এবং যৎসামান্য চোট পান। ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায়। কয়েকদিন পর আস্তে আস্তে মুখের ভেতরে এক বিজাতীয় স্বাদ টের পেতে শুরু করে ইভান। তারপর শুরু হয় যন্ত্রণার এক ধীর, নিশ্চিত এগিয়ে আসা। একসময় সেই যন্ত্রণা আর শারীরিক থাকেনা। হয়ে ওঠে যেন এক আধ্যাত্মিক যন্ত্রণা, উপশম নেই যার। তার মনে হয় এই হচ্ছে তার আত্মার স্বর, যার কাছে তাকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে।
তলস্তয়ের গল্পের অভিমুখ আলাদা ,আবেদনও অন্যরকম। আমি কয়েক পা এই গল্পটির সাথে হাঁটলাম, কারণ বছর ত্রিশ আগে গল্পটির এই অংশে ইভান ইলিচের এই আত্মার স্বর, এই অজাগতিক যন্ত্রণা আমার কাছে কবির যন্ত্রণার প্রতিরূপ হয়ে এসেছিল।
জোসেফ কে-এর প্রশ্ন, সন্ধান ও সংশয়েও কিছুটা সুদূরভাবে সেই আত্মার স্বর, সেই অজাগতিক রহস্যময় শক্তি-যা কবিতা হয়তো-তার সামনে কোনো কবির অসহায়, নিয়তি তাড়িত আত্মসমর্পণ দেখেছিলাম। খুবই কষ্টকল্পনা। বিসদৃশ দুটো বস্তুকে খুব জোর করেই জুড়ে দেবার চেষ্টা যেন। তবু মনে হয়েছিল যে, সেটা তো ঠিকই।
কাফকা কে আমি পড়েছি কবিতা পড়ার মতো করে। কোণঠাসা, ভীত। নানারকম ছন্নছাড়া জটিল একজন কবি-কাফকাকে আমি এরকমই ভাবি। মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা রক্তস্রোত দেখে যাঁর একবারও মনে পড়ে না প্রবল হয়ে ওঠা যক্ষ্মা রোগের কথা, আসন্ন মৃত্যুর কথা। বরং তাঁর মনে হয় তিনি ফিরে যাচ্ছেন শৈশবে, আর অসুখ তাঁর মা। যেন ছোট্ট ফ্রানজ্ মায়ের ঠিক পাশে মায়ের স্কার্টের প্রান্ত মুঠোয় ধরে দাঁড়িয়ে।
এই অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে একজন কবিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
কাফকা একজন মহান কবি
আমি ওঁর অসম্ভব জায়গাটা একটু করে যেন বুজতে পারছি। খোলা আকাশের নিচে একটা পাথরের ওপর চেপে ধরে ছুরির আঘাতে তাকে হত্যা করার সময় জোসেফ দেখে একটা বাড়ির জানলা দিয়ে দু'হাত বাড়িয়ে দেওয়া একটি মানুষকে। বিদ্যুৎ চমকের মতো সে যখন মুক্তির সম্ভাব্যতা খুঁজছে, ছুরি বিঁধে যায় তার মধ্যে। "Like a dog!"... এই বিপন্নতা কাফকার, একজন দূরধিগম্য চেতনার কবির। সারাজীবন যিনি আশ্বাসের এই হাত খুঁজে বেরিয়েছেন। "সেই মানুষটির মতো লিখতে চাই আমি যে সেই হাতের আশ্রয়ে উন্মাদের মতো ছুঁড়ে দিতে পারে নিজেকে। "নিজের প্রসঙ্গেঁ একবার বলেছিলেন কাফকা।
যন্ত্রণার রক্তপাতের প্রাথমিক দিনগুলো (১৯৭১ সাল)একটি ডায়েরিতে কাফকা লিখলেন - "নতুন করে সবকিছু শুরু করার সুযোগ, যদি আদৌ তেমন কিছু থাকে, তুমি পেয়েছো। নষ্ট করোনা একে। "নষ্ট করলেন না। দুটো অক্টেভো নোটবুকের পাতলা পেঁয়াজের খোসা রঙের কাগজে লিখতে শুরু করলেন টুকরো টুকরো অনুভূতি-যা "দি জুরাউ অ্যাফরিজম্স্" নামে বের হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পরে। কাফকার সম্পূর্ণ সৃষ্টির মধ্যে একটি নীতিগল্পের চোরাস্রোত বহমান। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট-বিশেষ করে Book of Job- এর সাথে একটা ধরণগত মিল রয়েছে। এবার কাফকার কিছু লেখা পড়া যাক-
১) কারণ,আমরা সাদা তুষারে দাঁড়িয়ে থাকা নির্জন একা গাছের মতো, দেখে মনে হয় শুয়ে আছি ক্লান্তি নিয়ে, একটু টোকা দিলেই হয়তো গড়িয়ে যাব। কিন্তু,তা হবেনা, কারণ মাটির গভীরে চলে গেছে আমাদের শিকড়...অথচ এটা নিতান্তই একটা দৃশ্য ছাড়া আর কিছু নয়।(গাছ)
২) "অনন্তের পথ এতই সহজ!" - বিস্মিত হলো মানুষটি। সহজ,কারণ,তার নেওয়া পথ ছিল মসৃণ,পাহাড়ের ঢাল বেয়ে,নীচের দিকে, একছুটে যেখানে পৌঁছনো যায়।
৩) চিতাবাঘগুলো দরজা ভেঙে ঢোকে মন্দিরে। আর বলিদানের রক্ত ভরা পাত্রগুলো চেটে পরিস্কার করে দেয়। এভাবেই শুরু হয়েছিল। পরে ব্যাপারটা অনুষ্ঠানের আবশ্যিক অংশ হয়ে যায়।
৪) দেখা কতোভাবেই যায় কোনো আপেলকে, সেই দেখা হতে পারে ছোট্ট ছেলেটির, যে ঘাড় উঁচু করে দেখে টেবিলে রাখা আপেল; অথবা হতে পারে কোনো বয়স্ক মানুষের-যিনি তুলে নেন আপেলটি আর দিয়েছেন কোনো অতিথিকে।
৫) ভালো খেলোয়াড়দের থেকে দূরে রাখা হয় কোনো চমৎকার লাঠি, যতদিন না কোনো মহান খেলোয়াড় আসে, তীব্র দৃষ্টিতে একবার দেখে টেবিলকে, তারপর উন্মত্তের মতো এক ভয়াবহ খেলা শুরু করে দেয়।
আমি কাফকা পড়ি একজন তৃষ্ণার্ত যেভাবে জলের কাছে যায়, সেইরকম বেঁচে থাকার প্রয়োজনে।
এক নিস্তরঙ্গ জীবন ছিল কাফকার। সাদামাঠা একটা দিনের মতোই নিষ্প্রভ, কিন্তু তাঁর ভাবনার পৃথিবী কি ভয়ংকর সব দরজা খুলে দিল আমাদের কাছে।
এক নিস্তরঙ্গ জীবন ছিল কাফকার। সাদামাঠা একটা দিনের মতোই নিষ্প্রভ, কিন্তু তাঁর ভাবনার পৃথিবী কি ভয়ংকর সব দরজা খুলে দিল আমাদের কাছে।
অনুপম- - কিন্তু এই শীতল শান্ত অনুচ্চকিত রক্তপাত-সর্বব্যাপ্ত "না"কি সারাজীবন বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব? যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কতোদূর পর্যন্ত নির্মানব নিঃসঙ্গ হয়ে
থাকবেন? এছাড়াও, এইমাত্র আপনি যে
অ্যাফরিজমগুলোর কথা বললেন, সেখানে কি আপনার কবিতার ধারণার সবকিছু
পেয়ে যাচ্ছেন? আপনার কি মনে হচ্ছে এটাই স্থির অভিমুখ
হতে পারে কবিতার?
অমিতাভ - হ্যাঁ ,ঠিক যে কবিতায় যেভাবে শব্দরা আসে, ভাষাকে যেভাবে চকচকে পালিশ আর মসৃণতা দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হয়ে ওঠে-এই লেখাগুলোয় সেসবের তোয়াক্কা করাই হয় নি।এই তাচ্ছিল্যটা খুব দরকার,অনেকদিন ধরেই।বাঁধানো,ম সৃণ,কোটে বাঁধানো শব্দদের দিয়ে সার্কাস দেখানো যদি এতদিন পরেও চালিয়ে যেতে হয়, সেটা একধরনের দীনতা।
পাকিস্তানের একজন লেগব্রেক বোলার আব্দুল কাদিরের রান আপ ছিল খানিকটা দুলে ওঠা নাচের ভঙ্গিঁর মতো। চলাফেরা বা দৌড়ানোর সময় তিনি এই ভঙ্গিঁ চেষ্টা করেও আনতে পারতেন না। শুধু যখন বোলিং রান আপে, তখনই।
এভাবেই অনেক কবি এই "কবিতা" র সুপরিচিত মুদ্রায় ভর করে সুখপাঠ্য কবিতা লিখে যাচ্ছেন সহজ সিদ্ধির মোহে। তিনদিন আগে পড়া একটি কবিতা এরকম- “ হাঁসেরা া- নামবে...জল খুশি/কী বলো তো আর?/শীতকাল....শুধু একটা/শীতকাল দরকার। "কক কবিতাটি পড়তে পড়তে আমার পৃথিবী বদলে গেছিল। মনে হয়েছিল আমাদের দিনগুলো তাহলে শুধু আনন্দে ভেসে যাবার, আর প্রতিদিনের খবরের কাগজে নিশ্চই চমৎকার সব শরৎ ঋতুর বর্ণণা আর প্রেমের খবরে ভরে থাকে। নাহলে এমন কবিতা লেখা হয়?
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই গ্লেজ তোলা, চকচকে পালিশের কবিতায় কিছু পাইনা। এরকম কবিতাকে একসময় মেইনস্ট্রীম কবিতা বলা হতো। নতুন কবিতার স্বর। যা চিনি ঢেলে মিষ্টি করা নয়, শুধু কয়েকজনের মধ্যেই পাওয়া যেত তখন। যেমন শম্ভু রক্ষিত। তার আগে সমসময় থেকে ক্লিয়ার একধরনের ডিপার্চার থাকত উৎপলকুমার বসুর আর দীপক মজুমদারের কবিতায়। সবরকমের কবিতায় ডুবে থাকার জন্য আমিও তখন সেইরকম লেখার চেষ্টাই করতাম। আর ছিলেন সমীহ
জাগানো, অনতিপ্রজ মনীন্দ্র গুপ্ত, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তীর মতো কবিরা- সময়ের সাথে সাথে রেমব্রান্টের ছবির মতো, যাঁরা মহার্ঘ হয়ে উঠেছিলেন আমার কাছে। সাধারণ একটা ধারণা দেবার মতো কিছু নাম এলো এখানে। এটা কোনো তালিকা নয় কিন্তু।
অনুপম- কোনো তালিকা দিতেও হবেনা, আপনাকে। আমাদের প্রত্যেকরই কোনো কোনো কবির দিকে একটু বেশি টান থাকবে, যার কবিতায় তিনি বেশি কিছু খুঁজে পান। তাঁদের কবিতায় আপনি কি খোঁজেন,কি পান?
অমিতাভ - একটি উপকারী হাত যেন নেমে আসে তাঁদের কবিতা গুলো থেকে। তাঁদের কবিতা নিয়ে বেশি প্রশ্ন তোলা যায়না। শুধু তাঁদের উত্তরগুলো যে ঘোর জাগায় তার থেকে বেরোনোর রাস্তা থাকেই না প্রায়। প্রচুর নতুন শব্দ তাঁরা তৈরি করেন না। সবকিছুই একরকম জানা অ্যাম্বিয়েন্স থেকে আসে আর তোমাকে এক ঝটকায় তুলে নেয়। অন্যদের কবিতা যেখানে মনে মনে তারিফ করা যায়, চমক জাগিয়ে যখন উপহারের মতো কোনো লাইন আসে কিন্তু যাঁদের নাম বললাম তাঁদের কবিতায় ঠিক এইভাবে কিছু আসেনা। ব্যাপারটা এভাবে বলা যায় কিনা দেখি।
'আমার জানলা দিয়ে দূরের জারুলগাছে চমৎকার একটা পাখি এসে বসেছে। খুব বেশি দেখিনি আগে, এতো চমৎকার কোনো পাখি। মুগ্ধ হলাম দেখে।দৌড়ে গেলাম মাকে ডাকতে ,পাখিটা দেখাতে। কবিতা পড়তে পড়তেও তো এই মুগ্ধ উচ্ছ্বাস এসে যায়!আবার, ধরা যাক,একদৃষ্টে পাখিটাকে দেখতে এই প্রাথমিক আনন্দের উচ্ছ্বাস কখন যেন হারিয়ে গেছে আর আমি যেন আস্তে আস্তে ঢুকে যাচ্ছি পাখিটার মধ্যে। এই মুহূর্তে পাখিটা আর মুগ্ধতা বহন করছে না। সে বরং হয়ে উঠছে অন্যকিছু। প্রয়োজনীয় কিছু-কবিতাটি তার খসখসে, ভেজা, অস্বস্তিকর মুখগহ্বরে টেনে নিচ্ছে আমাকে। আমি এই কবিতার জন্য বসে থাকি।
অমিতাভ - হ্যাঁ ,ঠিক যে কবিতায় যেভাবে শব্দরা আসে, ভাষাকে যেভাবে চকচকে পালিশ আর মসৃণতা দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হয়ে ওঠে-এই লেখাগুলোয় সেসবের তোয়াক্কা করাই হয় নি।এই তাচ্ছিল্যটা খুব দরকার,অনেকদিন ধরেই।বাঁধানো,ম সৃণ,কোটে বাঁধানো শব্দদের দিয়ে সার্কাস দেখানো যদি এতদিন পরেও চালিয়ে যেতে হয়, সেটা একধরনের দীনতা।
পাকিস্তানের একজন লেগব্রেক বোলার আব্দুল কাদিরের রান আপ ছিল খানিকটা দুলে ওঠা নাচের ভঙ্গিঁর মতো। চলাফেরা বা দৌড়ানোর সময় তিনি এই ভঙ্গিঁ চেষ্টা করেও আনতে পারতেন না। শুধু যখন বোলিং রান আপে, তখনই।
এভাবেই অনেক কবি এই "কবিতা" র সুপরিচিত মুদ্রায় ভর করে সুখপাঠ্য কবিতা লিখে যাচ্ছেন সহজ সিদ্ধির মোহে। তিনদিন আগে পড়া একটি কবিতা এরকম- “ হাঁসেরা া- নামবে...জল খুশি/কী বলো তো আর?/শীতকাল....শুধু একটা/শীতকাল দরকার। "কক কবিতাটি পড়তে পড়তে আমার পৃথিবী বদলে গেছিল। মনে হয়েছিল আমাদের দিনগুলো তাহলে শুধু আনন্দে ভেসে যাবার, আর প্রতিদিনের খবরের কাগজে নিশ্চই চমৎকার সব শরৎ ঋতুর বর্ণণা আর প্রেমের খবরে ভরে থাকে। নাহলে এমন কবিতা লেখা হয়?
ব্যক্তিগতভাবে আমি এই গ্লেজ তোলা, চকচকে পালিশের কবিতায় কিছু পাইনা। এরকম কবিতাকে একসময় মেইনস্ট্রীম কবিতা বলা হতো। নতুন কবিতার স্বর। যা চিনি ঢেলে মিষ্টি করা নয়, শুধু কয়েকজনের মধ্যেই পাওয়া যেত তখন। যেমন শম্ভু রক্ষিত। তার আগে সমসময় থেকে ক্লিয়ার একধরনের ডিপার্চার থাকত উৎপলকুমার বসুর আর দীপক মজুমদারের কবিতায়। সবরকমের কবিতায় ডুবে থাকার জন্য আমিও তখন সেইরকম লেখার চেষ্টাই করতাম। আর ছিলেন সমীহ
জাগানো, অনতিপ্রজ মনীন্দ্র গুপ্ত, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, ভাস্কর চক্রবর্তীর মতো কবিরা- সময়ের সাথে সাথে রেমব্রান্টের ছবির মতো, যাঁরা মহার্ঘ হয়ে উঠেছিলেন আমার কাছে। সাধারণ একটা ধারণা দেবার মতো কিছু নাম এলো এখানে। এটা কোনো তালিকা নয় কিন্তু।
অনুপম- কোনো তালিকা দিতেও হবেনা, আপনাকে। আমাদের প্রত্যেকরই কোনো কোনো কবির দিকে একটু বেশি টান থাকবে, যার কবিতায় তিনি বেশি কিছু খুঁজে পান। তাঁদের কবিতায় আপনি কি খোঁজেন,কি পান?
অমিতাভ - একটি উপকারী হাত যেন নেমে আসে তাঁদের কবিতা গুলো থেকে। তাঁদের কবিতা নিয়ে বেশি প্রশ্ন তোলা যায়না। শুধু তাঁদের উত্তরগুলো যে ঘোর জাগায় তার থেকে বেরোনোর রাস্তা থাকেই না প্রায়। প্রচুর নতুন শব্দ তাঁরা তৈরি করেন না। সবকিছুই একরকম জানা অ্যাম্বিয়েন্স থেকে আসে আর তোমাকে এক ঝটকায় তুলে নেয়। অন্যদের কবিতা যেখানে মনে মনে তারিফ করা যায়, চমক জাগিয়ে যখন উপহারের মতো কোনো লাইন আসে কিন্তু যাঁদের নাম বললাম তাঁদের কবিতায় ঠিক এইভাবে কিছু আসেনা। ব্যাপারটা এভাবে বলা যায় কিনা দেখি।
'আমার জানলা দিয়ে দূরের জারুলগাছে চমৎকার একটা পাখি এসে বসেছে। খুব বেশি দেখিনি আগে, এতো চমৎকার কোনো পাখি। মুগ্ধ হলাম দেখে।দৌড়ে গেলাম মাকে ডাকতে ,পাখিটা দেখাতে। কবিতা পড়তে পড়তেও তো এই মুগ্ধ উচ্ছ্বাস এসে যায়!আবার, ধরা যাক,একদৃষ্টে পাখিটাকে দেখতে এই প্রাথমিক আনন্দের উচ্ছ্বাস কখন যেন হারিয়ে গেছে আর আমি যেন আস্তে আস্তে ঢুকে যাচ্ছি পাখিটার মধ্যে। এই মুহূর্তে পাখিটা আর মুগ্ধতা বহন করছে না। সে বরং হয়ে উঠছে অন্যকিছু। প্রয়োজনীয় কিছু-কবিতাটি তার খসখসে, ভেজা, অস্বস্তিকর মুখগহ্বরে টেনে নিচ্ছে আমাকে। আমি এই কবিতার জন্য বসে থাকি।
অনুপম- দিনের শেষে কবি কি একজন তৃপ্ত মানুষ?
অমিতাভ- পাহাড়ের চূড়ায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা একজন মানুষ-স্বর্গ থেকে আগুন নিয়ে আসার অপরাধের শাস্তি হিসেবে একটা মাংসভূক পাখি যার লিভার রোজ ঠুকরে ঠুকরে খায়। ধরো সেদিনের মতো ফিরে গেছে সেই ঈগল। পরেরদিন আবার তাকে আসতে হবে মানুষটার কাছে। এই যে অবসরটুকু, যখন ঈগল নেই আর তার লিভার প্রস্তুত হচ্ছে পরের দিনটির জন্য - মানুষ কি তৃপ্ত থাকবে সেটা পেয়ে?
একজন কবির রক্তক্ষরণও এরকম। তার কোনো পরিত্রাণ নেই,তৃপ্তি নেই। সে নিজেই ডেকে এনেছে এই ধারাবাহিক রক্তমোক্ষণের নিয়তি। তার অতৃপ্তি তার সন্ধান, সব লেখা আছে সেই ঈগলের ঠোঁটে। প্রমিথিউসকে বাঁধনছারা করা যায়। কিন্তু "বোধ" থেকে আলো অন্ধকারে যাওয়া থেকে,কবিকে মুক্তি দেওয়া যায় না।
আবার,অন্যভাবে দেখলে, ঈগলেরও কিন্তু মুক্তি নেই। সেও দন্ডপ্রাপ্ত অসহায় একইরকম। কবির "শব্দ" কি এই ঈগল? উরু ভেদ করে যাওয়া বজ্রকীট পরে কখনও এটা নিয়ে ভাবা যাবে। তবে রাজকবিদের এসব সমস্যা হয় না। শুধু মাঝে মাঝে নীলমাছিরা জ্বালায়। “যদি তুমি কুকুরের সঙ্গে জীবন বদলাও, নীলমাছি তোমাকে ঘিরে ধরবেই" -এরকম কোনো প্রবাদ থাকতেও পারে কোথাও। আছে নাকি, অনুপম?
অননুপম- রাজকবি কারা হতে পারে আপনার চোখে, আমি জানি। ওঁদের নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। চাকরি সূত্রে কিছুটা পোড়ো জীবন কাটিয়েছেন, এখন আপনার জীবন কয়েক মাইল শান্তিকল্যাণ হয়ে গেছে। পুরনো রণ-রক্ত-সফলতার দিনগুলো মনে পড়ে? হারিয়ে যাওয়া প্রশাসককে জাগিয়ে তোলে সেই স্মৃতি?
অমিতাভ- "I only remember those were pearls that her eyes" - হা হা। মনে পড়ে... এমন সব স্মৃতি... যা বীভৎস নয়,যেখানে নেক্রোম্যানিয়া নেই.... খুব শান্ত টুকরো টুকরো ছবি। ভেতরের সেই প্রশাসক কি আর মরে যায়?আছে।তবে অনেক নিচে ডুবে আছে।আমি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টল অ্যান্ড অর্ডার, এ সার্জেন্ট সিচুয়েশন এর মুখোমুখি হতেই পছন্দ করতাম। বন্যা, নির্বাচন...এইসব।
খবরের কাগজ বা টিভিতে এমন কিছু দেখলে নিজের মনেই ভাবি এই অবস্থায় আমি কী কী করতাম।
এখন মাকড়সা দেখি,সত্যি! গ্রিলের দরজার বাইরে ছোট্ট একটা ছাই-সবুজ রঙের মাকড়সা প্রায় অদৃশ্য নানা জালে ঝুলতে ঝুলতে চল্লিশ ফুট উঁচু শূণ্যের ইলেকট্রিক তারে পৌঁছে সেখান থেকে পাশের বাড়ির গ্রিলে চলে যায়। ঝোড়োহাওয়ায় জাল ছিঁড়ে যায় মাঝে মাঝেই। যন্ত্রের মতো আবার সে নতুন জাল বুনতে শুরু করে। রবিনসন ক্রুশো নাম ওর। জীবনানন্দের "বেড়ালে" এর মতো সারাদিন ঘুরে ফিরেই ওর সাথে দেখা হয় আমার। সে আমাকে ধীর হতে শেখায়, অস্থিরতা ছেড়ে একাগ্র হতে বলে তার মতো। আমি জানি এভাবে অনন্ত এক জাল কয়েককোটি বছর ধরে একা তৈরী করে যাবে সে। একা! একা! একা!
অনুপম- কবিতার মুহূর্তে যেভাবে একা হয়ে যান কবি..?
অমিতাভ- হ্যাঁ। একাই তো। একা একটা মাকড়সা তার জাল বেয়ে একদিন চাঁদের মাটিতে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে নামবে। হতে কি পারেনা এমন! সেই যে এক ছোট্ট হাইকু পড়েছিলাম,যেখানে একটা পিঁপড়েকে বলা হচ্ছে "ও পিঁপড়ে,তুমি পার হয়ে যাও ফুজিয়ামা পাহাড়।...কিন্তু আস্তে! আস্তে! কয়েককোটি জন্মেও পিঁপড়ে যা পারবে না, তাকে ডাকা হচ্ছে সেই কাজে। এবং (ভাবা যায়!) নিষেধ করা হচ্ছে তাড়াহুড়ো করতে! আহ!
একা ও তো কতোরকমের হয়,অনুপম। রাতে বাড়ির পেছনের গাছে 'গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়া একা সুখেশ্বরের বুক ফাটা কান্না শুনেছিলাম যে বয়সে, তার কাছাকাছি সময়েই বাড়ি থেকে ২০০ ফিট দূরে এক জনশূণ্য সুড়কির রাস্তায় ট্রাকের ধাক্কায় কোমর আর পাঁজর ভেঙে পড়ে থাকা এক বিশালকায় মোষের মর্মছেঁড়া চিৎকার বছর সাতেকের দুটো ছেলে পরস্পরকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে, শুনে দৌড়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। সেই দুই বন্ধুর মধ্যে একজন আমি। দূরের রাস্তা থেকে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে সেই মোষের আর্ত কান্না ঘুমের মধ্যে বারবার শুনেছি। সকালে একটু ঘাস আর জল নিয়ে আবার দুজন সেখানে। দেখলাম মুখ থেকে গড়িয়ে নামা রক্ত শুকিয়ে গেছে সুড়কির ওপর। ভেজা ঘাস আর জল রেখে দিলাম মুখের কাছে। ওগুলো তো ফিরিয়ে আনা যায় না।
অমিতাভ- পাহাড়ের চূড়ায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা একজন মানুষ-স্বর্গ থেকে আগুন নিয়ে আসার অপরাধের শাস্তি হিসেবে একটা মাংসভূক পাখি যার লিভার রোজ ঠুকরে ঠুকরে খায়। ধরো সেদিনের মতো ফিরে গেছে সেই ঈগল। পরেরদিন আবার তাকে আসতে হবে মানুষটার কাছে। এই যে অবসরটুকু, যখন ঈগল নেই আর তার লিভার প্রস্তুত হচ্ছে পরের দিনটির জন্য - মানুষ কি তৃপ্ত থাকবে সেটা পেয়ে?
একজন কবির রক্তক্ষরণও এরকম। তার কোনো পরিত্রাণ নেই,তৃপ্তি নেই। সে নিজেই ডেকে এনেছে এই ধারাবাহিক রক্তমোক্ষণের নিয়তি। তার অতৃপ্তি তার সন্ধান, সব লেখা আছে সেই ঈগলের ঠোঁটে। প্রমিথিউসকে বাঁধনছারা করা যায়। কিন্তু "বোধ" থেকে আলো অন্ধকারে যাওয়া থেকে,কবিকে মুক্তি দেওয়া যায় না।
আবার,অন্যভাবে দেখলে, ঈগলেরও কিন্তু মুক্তি নেই। সেও দন্ডপ্রাপ্ত অসহায় একইরকম। কবির "শব্দ" কি এই ঈগল? উরু ভেদ করে যাওয়া বজ্রকীট পরে কখনও এটা নিয়ে ভাবা যাবে। তবে রাজকবিদের এসব সমস্যা হয় না। শুধু মাঝে মাঝে নীলমাছিরা জ্বালায়। “যদি তুমি কুকুরের সঙ্গে জীবন বদলাও, নীলমাছি তোমাকে ঘিরে ধরবেই" -এরকম কোনো প্রবাদ থাকতেও পারে কোথাও। আছে নাকি, অনুপম?
অননুপম- রাজকবি কারা হতে পারে আপনার চোখে, আমি জানি। ওঁদের নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। চাকরি সূত্রে কিছুটা পোড়ো জীবন কাটিয়েছেন, এখন আপনার জীবন কয়েক মাইল শান্তিকল্যাণ হয়ে গেছে। পুরনো রণ-রক্ত-সফলতার দিনগুলো মনে পড়ে? হারিয়ে যাওয়া প্রশাসককে জাগিয়ে তোলে সেই স্মৃতি?
অমিতাভ- "I only remember those were pearls that her eyes" - হা হা। মনে পড়ে... এমন সব স্মৃতি... যা বীভৎস নয়,যেখানে নেক্রোম্যানিয়া নেই.... খুব শান্ত টুকরো টুকরো ছবি। ভেতরের সেই প্রশাসক কি আর মরে যায়?আছে।তবে অনেক নিচে ডুবে আছে।আমি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টল অ্যান্ড অর্ডার, এ সার্জেন্ট সিচুয়েশন এর মুখোমুখি হতেই পছন্দ করতাম। বন্যা, নির্বাচন...এইসব।
খবরের কাগজ বা টিভিতে এমন কিছু দেখলে নিজের মনেই ভাবি এই অবস্থায় আমি কী কী করতাম।
এখন মাকড়সা দেখি,সত্যি! গ্রিলের দরজার বাইরে ছোট্ট একটা ছাই-সবুজ রঙের মাকড়সা প্রায় অদৃশ্য নানা জালে ঝুলতে ঝুলতে চল্লিশ ফুট উঁচু শূণ্যের ইলেকট্রিক তারে পৌঁছে সেখান থেকে পাশের বাড়ির গ্রিলে চলে যায়। ঝোড়োহাওয়ায় জাল ছিঁড়ে যায় মাঝে মাঝেই। যন্ত্রের মতো আবার সে নতুন জাল বুনতে শুরু করে। রবিনসন ক্রুশো নাম ওর। জীবনানন্দের "বেড়ালে" এর মতো সারাদিন ঘুরে ফিরেই ওর সাথে দেখা হয় আমার। সে আমাকে ধীর হতে শেখায়, অস্থিরতা ছেড়ে একাগ্র হতে বলে তার মতো। আমি জানি এভাবে অনন্ত এক জাল কয়েককোটি বছর ধরে একা তৈরী করে যাবে সে। একা! একা! একা!
অনুপম- কবিতার মুহূর্তে যেভাবে একা হয়ে যান কবি..?
অমিতাভ- হ্যাঁ। একাই তো। একা একটা মাকড়সা তার জাল বেয়ে একদিন চাঁদের মাটিতে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে নামবে। হতে কি পারেনা এমন! সেই যে এক ছোট্ট হাইকু পড়েছিলাম,যেখানে একটা পিঁপড়েকে বলা হচ্ছে "ও পিঁপড়ে,তুমি পার হয়ে যাও ফুজিয়ামা পাহাড়।...কিন্তু আস্তে! আস্তে! কয়েককোটি জন্মেও পিঁপড়ে যা পারবে না, তাকে ডাকা হচ্ছে সেই কাজে। এবং (ভাবা যায়!) নিষেধ করা হচ্ছে তাড়াহুড়ো করতে! আহ!
একা ও তো কতোরকমের হয়,অনুপম। রাতে বাড়ির পেছনের গাছে 'গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়া একা সুখেশ্বরের বুক ফাটা কান্না শুনেছিলাম যে বয়সে, তার কাছাকাছি সময়েই বাড়ি থেকে ২০০ ফিট দূরে এক জনশূণ্য সুড়কির রাস্তায় ট্রাকের ধাক্কায় কোমর আর পাঁজর ভেঙে পড়ে থাকা এক বিশালকায় মোষের মর্মছেঁড়া চিৎকার বছর সাতেকের দুটো ছেলে পরস্পরকে ভয়ে জড়িয়ে ধরে, শুনে দৌড়ে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। সেই দুই বন্ধুর মধ্যে একজন আমি। দূরের রাস্তা থেকে ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে সেই মোষের আর্ত কান্না ঘুমের মধ্যে বারবার শুনেছি। সকালে একটু ঘাস আর জল নিয়ে আবার দুজন সেখানে। দেখলাম মুখ থেকে গড়িয়ে নামা রক্ত শুকিয়ে গেছে সুড়কির ওপর। ভেজা ঘাস আর জল রেখে দিলাম মুখের কাছে। ওগুলো তো ফিরিয়ে আনা যায় না।
কেন জানিনা বেশ কয়েকবার চোখে জল এলো।
ReplyDeleteকত ভাবেই না কবি আমাকে ক্রমশ শিক্ষিত, আলোকিত করে তুলছেন! আর ওই মহিষ। আ:!
ReplyDelete