।। দেবতাদের অর্ঘ্য ।। শানু চৌধুরী ।।





দেবতাদের অর্ঘ্য
শানু চৌধুরী




একমাস হলো আজ চাকরিটা ছেড়ে দিলাম কোনো একটা কাজ বেশীদিন আমাকে জিইয়ে রাখেনা এখন শুধু ঘর আর চায়ের দোকানে বসে থাকি আজ ইচ্ছে হলো '3 Iron' সিনেমাটা দেখি আমার ওই ছেলেটার মতন হতে ইচ্ছে করছে আজ নায়কটার মতন অথবা শেষ দৃশ্যটার মতন ১৮০ ডিগ্রী আবছায়ায় থাকা প্র্যাকটিস করতে ইচ্ছে করছে ঘরটাও আজ চুপচাপকাল ভরপুর মাল খেয়েছি বলে মা মারতে মারতে হাতের শাঁখা ভেঙে ফেলল এরপর আমার কিইবা করার আছে

                                     "More than just skin deep"


সকালে ডেস্কটপ ওপেন করে বসে আছি কারণ ছাড়াই অথচ চার্বাকরা বলেন কারণ ছাড়া কার্য হয়না হয়ত, তাই আজকাল ফ্রয়েডকে বিশ্বাস করি বিশেষ করে ওই কথাটার ওপর -"তোমার শৈশবের স্মৃতির ওপরেই তুমি দাঁড়িয়ে" কলেজের A.B ম্যাডামকে মনে পড়ছে খুব না আসলে ম্যামকে নয়"Paradise Lost" পড়াবার দিনটাকে আমাকে তৃতীয় খন্ডের অর্থ বোঝাতে বললে আমি টি-শার্টে আঁকা স্যাটানের ছবি দেখিয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি স্যাটান, আমাকে ঈশ্বর পাঠিয়ে চিন্তিত এখন হয়তো আমার জন্যই পৃথিবী মূর্খের রাজ্য! ম্যাডাম চুপ ছিলেন চার্বাকের উদাহরণ বোধহয় ওটাই হাত কাঁপছে....

                              "I cannot die sans my soul"

জীবন একটা সীমাত্তোলিত কৌতুক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পাংশের এই লাইন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে টারবাইনের রূপে আর রাতের ট্রাকগুলো ঘুমোতে দেয়না মেইনরোডে বাড়ি থাকা একটা দোষ হেডলাইট জ্বলছে ড্রেন ভিউ হোটেলের মুখে
১১:৩০ এই শব্দ,বাক্যগুলোর পাশে লেখা ব্যাটারি কারখানার কাঁচামাল আনলোড করা খালাসির নাম প্রত্যাদেশ থেকে ফিরে আসছে বাবার হাঁটুব্যথার ওষুধ কর্পূর আর তেলের টোটকা অবস্থায় আমি কী করে যাব? প্রত্যেকেই গন্ডি বা সীমারেখা নিয়েই তাঁর সত্তাকে ভাবে
  '
কুষ্ঠরোগীর বৌ' এই গল্পটা পড়তে হয় শুধু একটা লাইনের জন্যজীবন আসলে একটা সিনট্যাক্সের চাহিদা পৃথিবীতে উপকার করে বড়লোক হওয়া যায়না আক্ষরিক অর্থটা নিজের স্বপোঁদ মারিয়েছি আমি রোজ তিনটে চাকরি ছেড়ে দিইয়ে...বাহাদুর ভাবছি আজকাল!


 "পরিবর্তন প্রাণের ধর্ম" 
বাবা বলেছিল সবার মাথার ভিতর একটা ব্রীজ থাকে বাসে এই কথাটা ভাবতে ভাবতেই একটা জিজ্ঞাসা উঠে এল কত মানুষের জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা একটা কলাম হয় আমি দেখেছি চাকরির জিজ্ঞাসা হলদিরাম ব্রীজটাও শেষ হয়ে এল আর সদাসক্রিয় পাখির কোনো অ্যাসেট হয়না লায়বিলিটিস্ হয়না ব্যালান্সশীট মেলেনা

দুপুরের খাওয়া শেষ হলে আমরা সত্যি কথাগুলো বলি বলে ফেলি সুখের চেয়ে শান্তি ভালো প্রকান্ড গর্ভের ভিতর বাবা হাসছেন আজ জলদি বাড়ি ফিরেছে বাবা বাবার গতিবিধি দেখে আমি বুঝতে পারি কী চাইতে পারে? রিমোট এগিয়ে দিতেই বলে উঠল চ্যানেলগুলো বেকার সার্ফ করা! আসলে প্রতিটা চ্যানেল বিজড়িত বিষণ্ণতা

কল্পনার শৃঙ্খলাবদ্ধ চেহারা মানে আজ বড়দিন আসলে আমার নিজস্বতা কেউ জানলই না কেউ বুঝলই না....সন্ধেতে কেক আনতে গিয়ে দেখলাম হাত পাততে হচ্ছে বাবার কাছে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও বাবার দেওয়া টাকা!

"হিজলের দানায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা"
ক্লান্তিহীন ভাবে বাবার পোশাকে ময়লা একটা মেশিন বিকল হলে এখনও বাবাই গতি তবে বাবা ইঞ্জিনীয়ার নন বাবা জীবনানন্দ লোকে এখনও মিথ গড়েনি তাঁকে নিয়ে গড়বে না কোনোদিন
মাদ্রাসা স্কুলের মাজার থেকে ভেসে আসছে আজান। ডায়মন্ড টেলার্সে প্যান্টের ছিট্ দিয়ে এসেছে বাবা নিয়ে আসার কথা আমারই কিন্তু; এই যে মাথায় শব্দ ঢুকলো "piquant" যার অর্থ দাঁড়ায় pleasantly tasting এই ধীরে ধীরে  সমস্ত কিছু চাখতে চাওয়ার শূণ্যস্থলে একটা ডিসঅর্ডার থাকে থাকে একটা ফিলজফিক্যাল রিমার্কস
যে ছেলেটা মোগলাই পরোটা বেলছে স্ট্রীট ফুডের দোকানে তার শিশুশ্রম নেই। আর্টিকল-২৪ এর এসকেপিস্ট সে। তবু চিৎকার বেড়ে যায় প্রসূতিসদনে। তাই হয়তো বলা যায় দেরিদার মতো-'আমি কখনও বাঁচতে শিখিনি, প্রকৃত বাঁচতে শেখার অর্থ মরতে শেখা' সাংঘাতিকভাবে আহত লোকও যুদ্ধজমিতে নেশাগ্রস্তের মতন কাজ করে চলে(জাগরী,পৃঃ৬৩) এই যুদ্ধটা আসলে ভাষার চতুঃসীমা। দেখি গাছ আর মানুষকে সহজীবির মতো করে
যেভাবে রোজনামচা লিখতে হয় তা একটা নেকেড বিউটি। এ ধারণা এখন স্পষ্ট। আর তাকে স্পষ্টতর করতে যুক্তিবল চাইনা। এটাই নিয়ম যা কখনও অতি-নিয়ম হবে না। ভাষার খেলা হতে পারে। আর হতে পারে ভাষার সমানুপাতিক ব্যবহার
স্বভাব এক ঝোঁক, প্রবণতা। যা থেকে প্রতিমুহূর্তে বেরিয়ে আসতে চাই। চাইনা কোনো বহুমুখী স্রোত আর আমার সাথে মিশুক। যার অভিঘাতে এক লুপ্ত অন্ধকার থাকে। থাকে মিথ্যাজাল। এটা কি নগ্ন প্রশ্ন? যদি তাই হয় তবে রিয়ালিজম কোথায়? আমাদের চেহারায় যে বাস্তব আর কল্পনা সবটাই জুড়ে আছে।তাকে অস্বীকার করবার প্রশ্ন উঠতেই পারেনা। আমি এই বক্তব্যকে নস্যাৎ করছি। আসলে মানসিকতার প্রতিফলন আছে অন্তঃসারশূণ্যতায়।যার কোনো দেওয়াল থাকতে হয়না,হয়না কোনো শৃঙ্খলার মৌলিকতা
আমি যা লিখলাম তা পুরোটাই আমার বিনির্মাণ। তবে নিজের সততা প্রমাণের দাবী আমি রাখিনা। দাবী শব্দটা Dauntless শব্দটাকে ভেঙে দেয়। যা আমি পুরোদস্তুর বাঁচিয়ে রাখতে চাই নিজের মতন করে। সামাজিক মানুষেরা যেভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চায় বিপরীত সামাজিক মানুষের থেকে
ঝড়ো হাওয়ায় আমি টিকে থাকতে পারিনি। টিকে থাকা একটা সারনেম যার অস্তিত্ব কতটা তা নিয়ে সন্দেহ জন্মানোই ভালো।সন্দেহকে অ্যাবরশন করার কলা নেই কোনো। ও ধীরে ধীরে গাঢ় হয়, সুগঠিত হয়।সুগঠিত,সফল ভ্রুণ। যে তোমাকে মারবে না, আহার দেবে প্রতিনিয়ত ঘৃণা করার।তারা শশাঙ্ক হয়। মাৎসনায়ের ছিপে তোলে কর্ণসুবর্ণ। এইটেই তো আসল সন্দেহ। সন্দেহের সিস্টেম।
যৌক্তিক ধ্রুবককে বুকে রাখা যায় কেবল। অনুভব করাযায়লক্ষণগুলোকে।দৃষ্টিগোচরতা থেকে অনেক দূরে বসবাস জীবন-সংগ্রামের। জীবন-সংগ্রাম একটা প্রকট হয়ে যাওয়া ডাস্টবিন মাত্র যার প্রচ্ছন্ন দশার অসন্তোষেই থাকে মূল ঘাম।প্রতিরূপ মঞ্চের মতো একটা পরিবেশে দানবের মতো ব্যাখা। ব্যাখা লিচিং পদ্ধতি মরা গাছগুলোকেও জল দেওয়া দায়িত্ব যার। “Irresponsibly responsible”  শুদ্ধতাও কখনও অভিজ্ঞতার হিডেন কোড মেনে চলে না।
সূর্যের নীচের মানুষেরা সব ভুল। চঞ্চলতার ভিড়ে ঠাসা।ঠাসা শব্দটা আমাকে পাপী    করে রেখেছে।আমার যে বন্ধু বারুদ ঠাসতে গিয়েছিল তার চোখের দাম ৪০লাখ।যে পালিয়েছিল তাঁর দেহটা শিক্ষক।সমস্যা আর আদর্শ সংঘাত দেয়।আর আমি ভাবি কোন চিহ্নতে আমি দুটোকেই রেখে আসব।স্মৃতির শিঁশিতে আমাদের obsession নামের যে টিঙ্কচার থাকে তা মৌলিক ওষুধ নয়,ঘায়ের পরতে পরতে জড়িয়ে যাওয়া মলম মাত্র।

চলো,পেশিগুলোকে রিল্যাক্স করাই।রোদের চেয়ে লেখা ভালো। MIGRAVAS-20 গিললে মাথাটা কথা বলে না। যথেচ্ছার করতে পারেনা।বেশি চুপচাপ থাকে। পূর্ণচ্ছেদ তাদের বাবা-মা।চারবার অপারেশনের পড়েও MIGRAVAS-20 একটা কমদামী ওষুধ যন্ত্রণা থামায়।গণৎকার রত্ন দেয়।তবে ধুঁয়ে দিন চাতালের রক্তগুলো।ধুঁয়ে দিন না বৈদেহিকতার মোড়ক।শুরু করুন সাইকোমেট্রিক টেস্ট……………গোল টেবিলের উপরে ট্রেন থেকে কেনা কমলালেবু,মাঝে অলংকৃত তীরআমার ঘরের চাবিটা।ওষুধের তেজ কমে আসছে। রিল্যাক্স করবার মেয়াদও। চলো মাইকেলের মৃত্যুপড়ে ফেলি আবার।


4 comments:

  1. আইসা হ্যায় কেয়া। ও

    ReplyDelete
  2. দারুন লাগলো শানুদা। এধরনের গদ্য লিখে ফেলা খুব প্রয়োজন , যেন ভেতর থেকে কিছু বেরোচ্ছে। তাকে থামানো যায়না ,বেরিয়ে আসে। আমি এইসব গদ্য খুব পছন্দ করি।

    ReplyDelete