।। কবিতা ।। তৈমুর খান ।।


তৈমুর খানের তিনটি কবিতা




ভল্লুক

ভল্লুকের খেলা দেখিতেছি
আর ভাবিতেছি, আমাদের দেশে এত ভল্লুক কীভাবে জন্মাইল  ?

ভল্লুকের পিঠে চড়িতে চাহি নাই
ভল্লুকের সঙ্গে বন্ধুত্বও করিতে চাহি নাই
শুধু ভাবিতেছি, রাত্রির অন্ধকারে আমাদের দরজাবিহীন ঘরে
যদি ভল্লুকেরা ঢুকিয়া পড়ে  !

তাহাদের বিশাল হা মুখে এক একটা পৃথিবী
অনায়াসে প্রবেশ করিতে পারিবে
আমাদের বাজার দোকান হাট
সুন্দরী কন্যারাও তাহাদের পেটে চলিয়া যাইতে পারে


ভল্লুকের খেলা দেখিতে দেখিতে সাম্রাজ্যবাদের
হাততালিরও শব্দ পাইতেছি
ওহে ঈশ্বর, এই যুগ কি ভল্লুকের যুগ হইল ?

উহারা থাবা তুলিয়া নাচ দেখাইতেছে
আলিঙ্গন করিতে করিতে, আদর করিতে করিতে
কখন হৃৎপিণ্ড ছিত্র করিয়া দিয়া যাইবে

ওহে ঈশ্বর, ভল্লুকে ভল্লুকে দেশ ভরিয়া যাইতেছে  !



সিংহ


সিংহাসন হইতে সিংহ নামিয়া আসিতেছে
আমরা দেখিতেছি, অরণ্যময় কী দারুণ সংকট

সকলেই বাঁচিবার জন্য পলায়ন করিতেছে
কিন্তু আশ্চর্য, কেহ বাঁচিবে না
সকলেই এখন লোকালয় খুঁজিতেছে
কিন্তু কোথাও নিরাপদ লোকালয় নাই
সকলেই নিশ্ছিদ্র অরণ্য খুঁজিতেছে
কিন্তু সর্বত্রই আলোকময় সভ্যতা গর্জন করিতেছে  

মায়ের নিকানো উঠানটুকুতেই উন্মুখ হইয়া চাহিয়া আছি
বাবা চলিয়া গেলে এখনও তাহার পদশব্দ শুনিতেছি

রাত্রি নামিবার আগে কী এক বিষণ্ণ নামিতেছে

সিংহ আমার কাছে আসিলে কী বলিব ?
সিংহ বিনয় বোঝে না, সৌজন্য বোঝে না
সিংহ পড়াশোনা করিয়া মানুষ হইতে চাহে না !



আক্রোশ

আক্রোশের মেঘলা সীমানায় দাঁড়াইয়া আছি
বৃষ্টির বিলম্ব হইবে না

আমরা ভিজিব
ক্রোধের বজ্রে পুড়িব
আমাদের পলায়ন করিবার পথ নাই

অপরাহ্ন গড়াইয়া যাইতেছে
শহরের হ্রদে পুঁটিমাছগুলি লাফাইতেছে
প্রেমের আলোর মহিমা কিছুই বুঝিতে পারিলাম না

কেহ কেহ দীক্ষা লইবার জন্য গুরু খুঁজিতেছে
কেহ কেহ সস্তায় মোক্ষ কিনিতেছে
আমরা হরিতকি বনের লাল ঠোঁট পাখির দিকে চাহিয়া আছি

বিপন্ন কাছাকাছি আসিতেছে বুঝিয়া
আধখাওয়া দু একটা পাকা ফলের ঘ্রাণ শুঁকিয়া লইতেছি

আহা শূন্যতায়ও সুন্দর মিশিয়া আছে

আক্রোশ গান শুনিবে না, সৌন্দর্য সহ্য করিবে না
চোখরাঙানির পর বৃষ্টি নামাইবে…..






3 comments:

  1. অসামান্য কবিতাগুলো। মুগ্ধ হলাম।

    ReplyDelete
  2. কবিতাগুলোর ভেতর দিয়ে একটা দ্যুতি মত খেলিয়া যাইতেছে। তাহা অনুভব করিলাম, ধরিতে পারিলাম না, তাহার পিছু পিছু ধাইতে পারিলাম না।

    ReplyDelete
  3. আহা শূন্যতায় ও সুন্দর মিশিয়া আছে
    অনবদ্য শব্দ ঝংকার

    ReplyDelete