দুটি
কবিতা : রঞ্জিত
সিংহ
· সাইকোসিস
গিরগিটি রঙ বদলায় – আমি দেখেছি যখন,
সেটা শুধু দেখার বয়স, বলার নয়।
তবু মামণিকে বলেছিলাম, কেমন সবুজ লাল হয়ে গেল।
মামণি বললে, কাছে যেও না, কখনও দাঁড়িও না।
তোমার গায়ের রক্ত বাতাসে বাতাসে চলে যায় ওটার শরীরে।
ভয় শেখবার পালা সেই তখন থেকে।
তারপর বাড়তে বাড়তে টগরফুলের টব, বইয়ের আলমারি,
মুরগির ঠ্যাং, সকালের স্বচ্ছ বাতাস, রাত্তিরের ফেরিঘাটে
গঙ্গার স্রোত,
প্রিয় মানুষজনের মুখ- সব কিছুতেই ভয়।
কেউ ভালো কথা বললেও ভয়,
খারাপ খারাপেও
অসুখ করলেও, না করলেও,
বেঁচে আছি তাতেও, মরে যাব সে কথা ভেবেও।
ভয় ছাড়া এখন আমার কাছে কোনো বই নেই।
নুখের স্যালাইভা দিয়ে সুতোর পাশ বাড়াতে বাড়াতে
মস্ত বট গাছ ছেয়ে, আমি মধ্যিখানে, গুটিগুটি মাকড়সা।
· খন্ডরিপু
দুর্যোধন মন্দিরে যখন পুজো দিয়ে ফিরি, সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়
হয়।
জনপ্রানীহীন গিরিজঙ্গলের ঝমঝমে অন্ধকার ছিঁড়ে
জানা পাকদন্ডী বেয়ে নামতে নামতে মনে হল
মন্দিরের চারপাশেই পাক খাচ্ছি।
হঠাৎ চকমা বিদ্যুতের মতো এক সন্ন্যাসী।
সন্ন্যাসী কোথায়, জলজ্যান্ত দুর্যোধন।
মূর্তি-দুর্যোধনে নির্ভয়ে ছিলাম, কিন্তু জ্যান্ত-দুর্যোধনে
ভয় হল।
কালো একগুচ্ছ তলোয়ার মার্কা গোঁফ, মাথায় বাবরি চুল,
তাতে বুনো গোলাপের বেড়, গায়ের বর্ণ কাঁচা সোনা,
কপালে রক্তের বড় টিপ, হাতের সুবর্ণদন্ডের মাথায় নবরত্ন।
নবরত্নের আলোয় জঙ্গল জ্বলছে।
আমার স্মৃতির ওপর তখন হুড়মুড় বৃষ্টি পড়ছিল।
একটা স্টেরিয়াফনিক্ ভয়স বাতাস, মেঘ, বৃষ্টি
ভেঙেচুরে চারধারে ভেসে যাচ্ছে। শব্দ অর্থবহ নয়,
কিন্তু ধ্বনির দ্যোতনা আছে।
আমার চোখের মণি, দুকানের লতি, ক্ষতের মামড়ি,
আঙুলের ছক্কাপাঞ্জা, পরনের কানি – ছিঁড়েখুঁড়ে
কবুতরের ছেঁড়া পাখা।
মন্দিরের চাতালে ছড়িয়ে গেছি। হাড়িকাঠে এক কোপে
ক্রমাগত বলি দিয়ে চলেছে আমাকে। যতবার বলি হচ্ছি,
ততবারই সেই খন্ডরিপু রক্তবমি করছে।
অন্ধকারে দ্রোণব্যূহ আমাকে চিতা গাছের ছাল পেতে দিয়ে
বলল, এখন থেকে তোর
নেত্রে ছানি, চর্মে ছত্রাক, শরীরে চূনের বস্তা-
শুয়ে থাক।
কী ভীমরতি আমার! না, দুর্যোধনের!
আমার দুর্ভাগ্য এবং সৌভাগ্য যে এর আগে কেউ আসার চিহ্ন রেখে যায় নি। আমিই প্রথম মন্তব্য করছি। আমার বিভৎস লেগেছে। ভয়ালসুন্দর। মা কালীর মত।
ReplyDeleteকেমন যেন খোলস ছেড়ে গেল ভাবনার!
ReplyDeleteValo
ReplyDelete